পাঁচ সংকটে প্রায় লণ্ডভণ্ড বিএনপি

বিএনপি নতুন করে আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়েছিল সে লক্ষে কিছু কর্মসূচিও পালন করেছিলো। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু কিছু দৃশ্যমান কর্মসূচি করেছিলো বিএনপি। কিন্তু কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে দলটি। নানা রকম সংকট এবং জটিলতায় দলটির অবস্থা এখন লণ্ডভণ্ড। সরকারের কোন রকম চাপ ছাড়াই বিএনপি বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত প্রায়। কেন বিএনপির এই অবস্থা হচ্ছে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এর পেছনে পাঁচটি কারণ দেখছেন।

১. দলের শীর্ষস্থানীয় নেত্রীবৃন্দের অসুস্থতা: বিএনপিতে এখন শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাই অসুস্থ। তারা কেউ হাসপাতালে অথবা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। অসুস্থ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিএনপিকে পরিচালিত করার জন্য যে সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব দরকার সেই নেতৃত্বের অভাব প্রকটভাবে অনুরুদ্ধ হচ্ছে। অসুস্থতার কারণে নেতারা কর্মীদের নিয়ে মাঠ নামতে পারছেন না, কোনো কর্মসূচিও দিতে পারছেন না।

২. শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি: বেগম খালেদা জিয়া গত বছরের ২৫ মার্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় বিশেষ বিবেচনায় জামিনে আছেন। সম্প্রতি তার জামিনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু জামিনে থাকলেও বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখেছেন। তিনি কোনরকম রাজনৈতিক ব্যাপারে দলকে পরামর্শ দিচ্ছেন না, কোন মতামতও দিচ্ছেন না। তাছাড়া লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও দল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন। দলের কিছু কোটারি গ্রুপ ছাড়া তার সাথে কারও যোগাযোগ নেই। শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব এইভাবে পরিচালনা করা যায় না বলে বিএনপির নেতারাই মানছেন। আর এই শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি বিএনপিকে বিপর্যস্ত করার আরেকটি বড় কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

৩. কমিটিহীন তৃণমূল: বিএনপির ৬০ ভাগ জেলায় কমিটিগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ অথবা অকার্যকর। কমিটিহীন থাকার কারণে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ে কার্যক্রম হচ্ছে না। বিএনপির একজন নেতা বলছেন ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির কোন কমিটি নেই। উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো থেকেও না থাকার মত, আর জেলা কমিটিগুলো প্রায় সবই মেয়াদউত্তীর্ণ। এই কমিটিহীন তৃণমূল থাকার কারণে বিএনপি মাঠ পর্যায়ে আন্দোলন সংগঠিত করা, এমনকি নির্বাচন পরিচালনা করার মতো অবস্থা নাই। ফলে নির্বাচন গুলোতে বিএনপির শোচনীয় বিপর্যয় ঘটছে যা কর্মীদেরকে হতাশ করছে।

৪. নেতাকর্মীরা গন্তব্যহীন: একটি রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট একটি গন্তব্য থাকে। একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য পরিকল্পনা থাকে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা জানেন না তাদের গন্তব্য কোথায়। বিএনপি কি চায় তা তাদের শীর্ষ নেতারাও বলতে পারেন না। আর এরকম গন্তব্যহীন অবস্থায় থাকার কারণেই বিএনপির অবস্থা হতাশার গভীরে চলে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

৫. আদর্শ থেকে সরে যাওয়া: বিএনপির মূল আদর্শ ছিল আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করা। আওয়ামী লীগ যেটা করবে সেটার বিরোধিতা করা, ভারত বিরোধিতা করা ইত্যাদি। কিন্তু ৭ মার্চ উদযাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির পরিবর্তিত অবস্থান দলের নেতাকর্মীদেরকে যেমন বিভ্রান্ত করেছে তেমনি উগ্রবাদী বিএনপি সংঘ ও সমর্থকদেরও হতাশ করেছে। যার ফলে বিএনপি থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে উগ্র-মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। এর ফলেই বিএনপি প্রায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম দাবি করা বিএনপি কিন্তু বর্তমানে বিএনপির যে সাংগঠনিক এবং দলীয় অবস্থান তাতে বিএনপি মৃতপ্রায় একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবেই জনগণের কাছে চিত্রিত হচ্ছে।